Yaba Sindicet | ভয়াবহ ইয়াবা সিন্ডিকেট
Wednesday 17 January 2018
Comment
Yaba Sindicet | ভয়াবহ ইয়াবা সিন্ডিকেট
Yaba Sindicet: একটি পরিবারের ভয়াবহ ইয়াবা সিন্ডিকেট: দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর মরণনেশা ইয়াবা। ধ্বংসের পথে দেশের যুবসমাজ। আর এর পেছনে রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ী হাজী সাইফুল করিম ও তার পরিবারের ১০ সদস্যের ভয়াবহ সিন্ডিকেট।
পরিবারটি প্রভাব খাটিয়ে বহাল তবিয়তে থেকে বিস্তৃত করে যাচ্ছে তাদের ইয়াবা ব্যবসা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার আশ্রয় পেয়ে সাইফুল করিম ও তার পরিবার একাজ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তালিকায় বাংলাদেশে ইয়াবার প্রধান ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে টেকনাফের শীলবনিয়া পাড়ার সাইফুল করিমকে। হাজী সাইফুল করিম সারাদেশে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে ‘এসকে’ নামেই পরিচিত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় দেখা গেছে, শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিম এবং তার ভাই রেজাউল করিম, রফিকূর করিম, মাহাবুবুল করিম ও আরশাদুল করিম মিলে সারাদেশে সবচেয়ে বড় ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
সাইফুল করিমের দুই শ্যালক- টেকনাফ বিএনপির নেতা জিয়াউর রহমান ও শ্রমিক দলের নেতা আবদুর রহমানও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় এই দুইজনের নামও রয়েছে।
গত বছর সাইফুলের শ্যালক জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমানের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সাইফুল করিমের ভগ্নীপতি সাইফুল ইসলামও এই ইয়াবা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। সাইফুল করিম ও তার ইয়াবা সিন্ডিকেটের সব সদস্য এখন প্রকাশ্যে থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তারা এখন টেকনাফে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণও করছে।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল নিজেকে টেকনাফ বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক বলে পরিচয় দেন। তার বৈধ ব্যবসার সাইনবোর্ডের নাম এসকে ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু গত ৯-১০ বছর ধরে এককভাবে ইয়াবা ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।
সাইফুল করিমের ইয়াবা সিন্ডিকেটের মূল শক্তি হিসেবে রয়েছে তার মামা মিয়ানমারে মংডুর আলী থাইং কিউ এলাকার মোহাম্মদ ইব্রাহিম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় দেখা গেছে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাঠান সাইফুলের মামা ইব্রাহিম ও তার অন্য সহযোগীরা। সাইফুল ও তার পরিবারের সদস্যরা মিয়ানমার থেকে এই ইয়াবা এনে সারা দেশে পাচার করেন।
ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিম ওরফে হাজী সাইফুলের নেটওয়ার্ক অনেক শক্তিশালী। মাদক ব্যবসা করে সাইফুল ও তার পরিবারের সদস্যরা এখন অবৈধভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক।
অভিযোগ উঠেছে, এই কালো টাকা দিয়ে সাইফুল তার ভিত অনেক শক্তিশালী করেছেন। হাত করেছেন অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাকে।
স্থানীয়রা জানান, গত ডিসেম্বরে মাঝামাঝি সময়ে টেকনাফে সাইফুলের শ্বশুরবাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। ওই সময় সাইফুলের শ্যালক আবদুর রহমানকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আটক করেও পুলিশ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
সাইফুল নিজে উপস্থিত হয়ে ইয়াবাসহ তার শ্যালক আবদুর রহমানকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেন। ওই সময় সাইফুল মোবাইলে এক শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে অভিযান চালানো পুলিশ কর্মকর্তার কথা বলিয়ে দিলে পুলিশ আবদুর রহমানকে ইয়াবাসহ ছেড়ে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফ থানার এক সিনিয়র কর্মকর্তা দুঃখ প্রকাশ করে ওই ঘটনা স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওই দিন সাইফুল করিমের কথা না শুনলে এতোদিনে আমাকে বদলি বা চাকরিচ্যুত হতে হতো।’
জানা গেছে, হাজী সাইফুল একসময় ছাত্রদলের রাজনীতি করতো। তার পরিবারের সকল সদস্য বিএনপি ঘরনার লোক। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাতারাতি সাইফুল ও তার পরিবার খোলস পাল্টে ফেলেন। ওই সময় তারা উখিয়া-টেকনাফের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন।
সাইফুল করিম বিয়ে করেছেন টেকনাফের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিএনপির রাজনীতিবিদ মো. আবদুল্লাহর ছোট বোনকে। সাইফুলের শ্যালক জিয়াউর রহমান উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। অপর শ্যালক আবদুর রহমান উপজেলা শ্রমিক দলের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের রয়েছেন।
কক্সবাজার র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর রুহুর আমিন জানিয়েছেন, সাইফুল করিমকে ধরতে সম্প্রতি দুইবার তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাকে ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সর্বশেষ যে তালিকা করা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, সাইফুল করিম স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ায় তিনি অর্থ দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তিনি চট্টগ্রামের ভিআইপি টাওয়ারে অবস্থান করেন।
চট্টগ্রামের টেরিবাজারে একটি কাপড়ের দোকানের আড়ালে তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইয়াবা পাচার করে।
চট্টগ্রামের টেরিবাজারে একটি কাপড়ের দোকানের আড়ালে তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইয়াবা পাচার করে।
টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইন উদ্দিন বলেন, সাইফুল করিম বা কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ীর কাছে তারা ভীত নন। সাইফুল নিজের অপকর্ম ঢাকতে নিজেই নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সাইফুল ও তার সিন্ডিকেটকে ধরার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যহত আছে।
একটি পরিবারের ভয়াবহ ইয়াবা সিন্ডিকেট; কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজু হক টুটুল জানিয়েছেন, সাইফুল করিম ও তার ভাইসহ পরিবারের নয়জন তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। সাইফুল নিজেকে আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে।
তিনি বলেন, সাইফুলের ওইসব অপপ্রচার ও কৌশলে পুলিশ চিন্তিত নয়। ইয়াবা পাচার রোধে সাইফুল করিম ও তার সিন্ডিকেটকে দমনে পুলিশের অভিযান অব্যহত আছে।
-তথ্য সূত্র - Website
0 Response to "Yaba Sindicet | ভয়াবহ ইয়াবা সিন্ডিকেট"
Post a Comment